আমলকি এক প্রকার ভেষজ ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম – Phyllanthus emblica. আকারে ছোট,একটু কষ কষ এবং তেঁতো স্বাদের এই আমলকিতে রয়েছে কমলার চেয়েও অধিক ভিটামিন সি রয়েছে। প্রথমে একটু কষ ভাব থাকলেও পরে একটা মিষ্টি স্বাদ পাওয়া যায়। আমলকি শুধু স্বাস্থ্যের পক্ষেই ভালো নয়, এটি ত্বক ও চুলের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আমলকির উপকারিতা
- আমলকি দাঁত এবং মাড়ি সুস্থ রাখে।
- ক্ষুধামন্দা দূর করে মুখের রুচি বাড়ায়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
- রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস (Rheumatoid arthritis) এবং অস্টিওপোরোসিস (Osteoporosis) রোগে আমলকির রস কাজ করে।
- প্যানক্রিয়াটাইটিস (Pancreatitis) নামক রোগে আমলকি কার্যকর। আমলকি প্যানক্রিয়াটাইটিস রোগের কারণে সৃষ্ট ক্ষত সারাতে সক্ষম।
- আমলকির ফল, পাতা এবং ছাল থেকে ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, কিডনির কিছু রোগের ওষুধ তৈরি করা হয়ে থাকে।
- আমলকি মানুষের রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা হ্রাস করতে পারে।
- লিভারের কর্মক্ষমতা পুনরুদ্ধার করে।
- স্কার্ভি বা দন্তরোগ সারাতে আলমকির জুড়ি মেলা ভার।
- আমলকী কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের (Central nervous system) উপর কাজ করে।
- আমলকির নিযাস দীর্ঘমেয়াদি সর্দি কাশি থেকে রক্ষা করে। আমলকির রস এবং মধু একত্রে মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশির প্রকোপ কমে।
- আমলকি হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের শক্তিবর্ধন করে।
- কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।
- বহুমূত্র অর্থাৎ ডায়বেটিস রোগে উপকারী।
- চোখ উঠলে কাঁচা আমলকিরর রস ব্যবহারে চোখে আরাম মিলে।
- দূষিত পদার্থ শরির থেকে বের করতে সাহায্য করে।
- আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে ।
- হাড়ের ভেতরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে।
- চোখের পেশিগুলোকে মজবুত করে তোলে।
- দৃষ্টিশক্তি প্রখর করে।
- চোখের ছানি পড়া প্রতিহত করে।
- গলব্লাডার স্টোন (Gallbladder stone) সৃষ্টি হতে বাধা দান করে।
- অগ্নাশয়ের কার্যকারিতা বাড়ায়।
- গলা ও মুখের আলসার হতে রক্ষা করে।
- দাঁত ও মুখের সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।
- বিপাক ক্রিয়া ঠিক রাখতে সহায়তা করে।
- রক্তে এন্টি অক্সিডেন্ট (Anti oxidant) এবং এন্টি ইনফ্লেমেটরি (Anti inflammatory) উপাদান বাড়িয়ে রক্ত পরিষ্কার রাখে।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের (Haemoglobin) মাত্রা বাড়ায়।
- রক্তে লোহিত রক্ত কণিকার ( RBC – Red blood cell) পরিমাণ বাড়ায়।
- দুধের সাথে আমলকির গুঁড়ো মিশিয়ে দিনে দুই বার খেতে পারেন এতে করে এসিডিটির সমস্যা কমবে।
- আমলকির জুস বা রস পেপটিক আলসার প্রতিরোধ করে।
- আমলকীর গুঁড়া এবং মধুর মিশ্রন প্রতিদিন খেলে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসে।
- প্রতিদিন আমলকির রস খেলে নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর হয়।
- ব্রঙ্কাইটিস ( Bronchitis) এবং এজমার (asthma) ক্ষেত্রে আমলকীর জুস উপকারী।
- শরীরের অপ্রয়োজনীয় ফ্যাট কমিয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
- আমলকিতে থাকা অ্যামিনো অ্যাসিড এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
- ফোড়ন দেওয়া আমলকির রস পান করলে জ্বর কমে।
- আমলকির রস এবং কর্পূর মিশিয়ে মাড়িতে লাগালে দাঁত ব্যাথা হতে মুক্তি পাবেন।
ত্বকের ক্ষেত্রে আমলকির উপকারিতা
- আমলকি ত্বক সুস্থ রাখে।
- বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ থেকে রক্ষা করে।
- আমলকি ও মধুর মিশ্রণ ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।
- আমলকির পেস্ট বানিয়ে মুখে লাগালে ত্বক পরিষ্কার ও উজ্জ্বল হওয়ার পাশাপাশি বলিরেখাও কমে।
চুলের ক্ষেত্রে আমলকির উপকারিতা
- আমলকি ব্যবহারে চুল সুস্থ ও সুন্দর থাকে।
- আমলকির তেল চুল পড়া কমায়।
- চুলের খুসকির সমস্যা দূর করে।
- আমলকি বেটে তা চুলে লাগালে অকালে চুল পাকা বন্ধ হবে।
- আমলকিতে থাকা অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং প্রোটিন চুলের বৃদ্ধি বাড়ায় এবং চুল গোড়া থেকে মজবুত করে।
- উজ্জ্বল ত্বকের পাওয়ার জন্য –
আমলকির পেস্ট, মধু ও দই মিশিয়ে ত্বকে লাগান এবং ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এটি ব্যবহারে উজ্জ্বল ত্বক পাবেন।
মেছতা থেকে মুক্তির জন্য আমলকির উপকারিতা
আমলকির রস এবকং চালের গুঁড়ো দিয়ে একটি স্ক্রাবার তৈরী করুন। মিশ্রণটি ত্বকে ভালোভাবে ঘষুন। ১০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করুন। এই স্ক্রাবার মেছতার সমস্যা দূর করবে।
আমলকি খাওয়ার নিয়ম
সকালে খালি পেটে ১০ মিলি গ্রাম আমলকির রস পান করতে পারেন। পরবর্তীতে সুবিধা অনুযায়ী পরিমান বাড়িয়ে ২০ মিলি গ্রাম করতে পারেন। তবে দৈনিক ২০ মিলি গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত না। দিনে দুই বার পান করতে পারেন। এছাড়া দিনে ২-৩ টা করে গোটা আমলকি খেতে পারেন।
আর যদি আমলকির গুড়ো সেবন করতে চান, তবে সকাল বেলা খালি পেটে পানির সাথে গুলিয়ে খেতে পারেন।
আমলকির ব্যবহার
১. সরাসরি কাঁচা ফল হিসেবেঃ আমলকি খাওয়ার সবচেয়ে সেরা উপায় কাঁচা ও গোটা ফল হিসেবে খাওয়া। চাইলে সাথে একটু লবন মিশিয়ে খেতে পারেন।
২. শুকনো ফল হিসেবেঃ ছোট ছোট টুকরো করে লবন, মরিচ গুড়ো দিয়ে মাখিয়ে কড়া রোদে বেশ কয়েক দিন শুকিয়ে নিন।এরপর একটি কৌটায় সংরক্ষন করএ রাখুন,অনেকদিন খেতে পারবেন।
৩. শুকনো আমলকির গুঁড়োঃ রোদে আমলকি ভালোভাবে শুকিয়ে তা গুঁড়ো করে খেতে পারেন।প্রতিদিন সকালে পানিতে গুলিয়ে খেতে পারেন বা বিভিন্ন শরবতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
৪. আমলকির রসঃ আমলকির রস ও খেতে পারেন।প্রতিদিন আমলকির রস পান করা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী।
৫. আমলকির তেলঃ আমলকির তেল ত্বক ও চুল উভয়ের জন্য খুবই উপকারি। ত্বক ও চুলের পুষ্টি যোগাতে সাহায্য করে। বিভিন্ন তেল ও শ্যাম্পু তৈরিতে আমলকি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৬. আমলকির আচারঃ খাওয়ার সাথে আমলকির আচার খেতে পারেন এতে করে হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে।
আমলকির অপকারিতা
১) আমলকিতে রয়েছে উচ্চ পরিমানে ভিটামিন সি ও ফাইবার,তাইঅতিরিক্ত আমলকি খেলে পেটের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন- অম্বল, পেট খারাপ, কোষ্টকাঠিন্য।
২) বেশি আমলকি খেলে সর্দি কাশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৩) আমলকিতে উচ্চ পরিমানে পটাশিয়াম থাকায় কিডনি রোগি বা ডায়বেটিস রোগিদের সমস্যা হতে পারে।
৪) সার্জারি হলে আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। রক্ত পাতলা হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে, তাই এই সময়ে আমলকি না খাওয়াই ভালো।
৫) অন্তঃসত্ত্বা (Pregnant) বা স্তন্যদানকারী মায়েরা আমলকি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৬) আমলকির প্রভাবে এলার্জিও হতে পারে। তাই যাদের এলার্জি ধাচ আছে তারা একটু বুঝে শুনে আমলকি খাবেন।
৭) মাথার ত্বক শুষ্ক হলে বা ত্বক শুষ্ক (Dry skin) হলে আমলকি না খাওয়াই ভালো। এই অবস্থায় আমলকি খেলে ত্বক আরো শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
এই ধরনের আরো পোস্ট-
আঙ্গুর ফলের উপকারিতা